সাত বছর আগে, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর শীর্ষগ্রস্ত আমদানি কর জারি করার সময়, ভিয়েতনামী করুন্দী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। তার SHDC Electronics কোম্পানি অ্যামেরিকায় প্রতিমাসে $2 মিলিয়ন মূল্যের ফোন ও কম্পিউটার অ্যাক্সেসোরিজ বিক্রি করে, কিন্তু ট্রাম্পের ৪৬% আমদানি করের ভয়ে তার ব্যবসা বিপদে পড়েছে।
আমেরিকার আমদানি করের ফলে: চীনের পণ্য দক্ষিণ এশিয়ায়
ট্রাম্পের ২০১৬ সালের আমদানি করের ফলে, চীনের কম মূল্যের পণ্যগুলি (যা অ্যামেরিকার বাজারের জন্য তৈরি ছিল) দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল, এবং স্থানীয় কোম্পানিদের ক্ষতি করেছিল। যদিও এই বাণিজ্যিক আরক্ষণশীলতা কিছু কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাইচেইনে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছিল, কিন্তু ট্রাম্প ২.০ এই সুযোগগুলি বন্ধ করার চেষ্টা করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বিপদজনক।
চীনের "বেল্ট অ্যান্ড রোড" এবং দক্ষিণ এশিয়ার অধিকার
চীন দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য "বেল্ট অ্যান্ড রোড" প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভিয়েতনামে রেলওয়ে, ক্যামবোডিয়ায় বার্তা এবং মালয়েশিয়ায় পোর্টস নির্মাণ করেছে। তবে অ্যামেরিকার আমদানি করের ফলে, এই দেশগুলি চীন ও অ্যামেরিকার মধ্যে প্রেক্ষিত রয়েছেন:
- ভিয়েতনাম : চীনের পণ্যের সঙ্গে প্রতিস্পর্ধা করতে পারে না, ফলে ১০০০ শিল্পকর্মীর বেকার হয়েছেন।
- মালয়েশিয়া : ২৪% আমদানি করের ভয়ে চিপ বাণিজ্য বিপদে পড়েছে।
- ক্যামবোডিয়া : ৪৯% আমদানি করের কারণে ৯০% ক্লোথিং ফ্যাক্টরি চীনের সম্পদ।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রী টেঙ্কু জাফরুল আজিজ বলেছেন, "আমরা চীন ও অ্যামেরিকা মধ্যে নির্বাচন করতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।"
অ্যামেরিকার কাছে: দক্ষিণ এশিয়ার দুঃখ ও দাবি
- ভিয়েতনাম : ট্রাম্পের সঙ্গে কলে অ্যামেরিকান পণ্যের আমদানি কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে, কারণ স্যামসাং, ইন্টেল, ফক্সকন্স সহ বিশ্বব্যাপী কোম্পানিরা এখানে প্রবেশ করেছেন।
- থাইল্যান্ড : ৩৬% আমদানি করের রোধে অ্যামেরিকায় বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে, যাতে অ্যামেরিকা তাদেরকে "দীর্ঘকালীন বাণিজ্যিক পার্টনার" হিসেবে গণ্য করে।
চীনের ক্ষতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার লাভ
- ইন্দোনেশিয়া : ১৪৫% আমদানি করের কারণে চীনের পণ্যের প্রবেশে স্থানীয় কোম্পানিরা ক্ষতিগ্রস্ত। হেলোপপি ব্র্যান্ডের মালিকা ইসমা সাভিত্রি বলেছেন, "আমাদের ৭ ডলার মূল্যের পিজামা চীনের ৩.৫ ডলারের পণ্যের সাম্মুখীন"।
- ক্যামবোডিয়া : চীনের পণ্য অ্যামেরিকায় প্রেরণের জন্য এখানকার মাধ্যমে চলেছে, কিন্তু ট্রাম্পের আমদানি কর এই পথ বন্ধ করবে।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব: দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা ও সমাধান
- বাণিজ্যিক সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ : ইন্দোনেশিয়া ২০০% আমদানি কর জারি করেছে, থাইল্যান্ড চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর লাগানোর সাথে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
- চীনের চিন্তা : চীনের পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার জমাটে পড়লে, এর বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা উদ্ভব করবে, বলে একজন চীনের পূর্ব রিপোর্টার বলেছেন।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন: কে লাভ করবে?
ট্রাম্পের আমদানি করের ফলে:
- দক্ষিণ এশিয়ার সুযোগ : চীনের বাণিজ্যিক বিপদে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বব্যাপী সাপ্লাইচেইনের মধ্যে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারে।
- চীনের বিপদ : চীনের পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বাস্তি কমতে পারে, যা চীনের বাণিজ্যিক শক্তির ক্ষতি করবে।
নীতিগত বাক্যালাপ
চীনের নেতা সিনহেন হিয়িং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করে বলেছেন, "আমরা সাথে হাত মেলে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।" কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ (যেমন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া) চীনের সঙ্গে সম্পূর্ণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে রাজি নয়, কারণ তাদের অর্থনীতির বেশিরভাগই চীনের বাজারে নির্ভরশীল।
শেষ কথা:
চীন-অ্যামেরিকার বাণিজ্যিক যুদ্ধের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া এখনও অস্থির। এই অঞ্চলের দেশগুলি এখন নতুন বাণিজ্যিক নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য, যা উভয় বৃহদাকার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে এবং স্ব-পৃষ্ঠান্তিক বাজার বিকাশকে প্রাধান্য দিবে।
0 Comments